ফাগুনের পাশাপাশি দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। সেই সঙ্গে চলছে অমর একুশে বইমেলা। সবমিলিয়ে কদর বেড়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ অন্যান্য ফুলের। তবে জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নানা ইস্যুতে শাহবাগ মোড় অবরোধ ও মানববন্ধন করতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। ফলে রাজধানীর সবচেয়ে বড় ফুলের পাইকারি ও খুচরা বাজারের ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, ভোর থেকেই রাজধানীর সবচেয়ে বড় ফুলের পাইকারি ও খুচরা বাজারে জমে উঠে। রাজধানীসহ আশপাশের জেলা থেকে এখানে খুচরা ফুল ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে আসেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাইকারি বেচা বিক্রি শেষ হয়ে যায়। পরে শাহবাগে থাকা দোকানগুলোতে খুচরা ও পাইকারি ফুল বিক্রি করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ মোড়ে রাস্তার ওপরে বসেছে ফুলের পাইকারি বাজার। সকাল ৮টার ভিতর পাইকারি বেচা-বিক্রি শেষ হয়ে যায়। পাইকারি বাজারে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় ছিল। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে দুপুর ১২টার দিকে যায়, দোকানগুলোয় খুচরা ক্রেতাদের উপস্থিতি কম দেখা যায়। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ক্রেতা নেই বললেই চলে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ফুলের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা এবং চায়না লিলিসহ নানা ধরনের ফুল সাজানো রয়েছে। দোকানগুলো সাজানো, ভাঁজ করা এবং কাচছাট করা ফুলে ভরা। কিন্তু ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল কম।
ফুল ব্যবসায়ীদের কাছে এবারের বাজার কিছুটা হতাশাজনক। ফুল ব্যবসায়ী কুতুব উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর আমরা বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিই। তবে এবার শবে বরাত, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের লগ্ন এবং শুক্রবার একসঙ্গে হওয়ায় বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। চট্টগ্রামের চেরাগি, আগ্রাবাদসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক ফুলের দোকান আছে, এসব দোকানে সাধারণত এই দুই-তিন দিনে দেড়-দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়, কিন্তু এবার ৫০ লাখ টাকাও হবে কি না, সন্দেহ আছে।
অপরাজিতা পুষ্প বিতানের তৌসিফ উদ্দিনও একই ধরনের হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল, তবে এবার বেচাকেনা একদম কম। বসন্তের আগের একদিন, মূল দিন ও পরের দিন এই তিনদিন ব্যবসা সবচেয়ে ভালো হয়। কিন্তু এবার শবে বরাত ও লগ্নের কারণে মানুষ ফুল কেনা কমিয়েছে।
এদিকে ফুলচাষি আবদুল কাদের জানান, প্রতি বছর এই সময়ের জন্য আমরা অপেক্ষা করি। এবার প্রচুর গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধা উৎপাদন করেছি, কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা ফুল কিনছেন কম, দামও কম দিচ্ছেন। ফলে লোকসানের শঙ্কায় আছি।
তবে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা উচ্ছ্বাসও দেখা গেছে। ব্যাংক কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, আমি আমার মায়ের জন্য সাদা চন্দ্রমল্লিকা কিনতে এসেছি। আগে দাম বেশি থাকলেও এবার তুলনামূলক কম মনে হলো।