বর্তমান বাংলাদেশে সংস্কার প্রস্তাব এক বহুল আলোচিত ইস্যু। রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গে গোটা দেশ আলোচনায় মুখর। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, টকশো, সভা, সেমিনার, চায়ের টেবিলসহ সর্বত্র চলছে সংস্কারবিষয়ক পর্যালোচনা। মানুষ চায় রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারসাধন। সম্প্রতি দেশে সংঘটিত হয়েছে গণআন্দোলন, যা বিপ্লবে পরিণত হয়। ফলে বিবিধ সংস্কার প্রস্তাবনার উদ্ভব। ‘জুলাই গণবিপ্লব-২০২৪’ নামে এ আন্দোলন দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটার অবসান চায়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা সংস্কারকরণের দাবিতেই জুলাই গণআন্দোলনের সূচনা। এ আন্দোলনে দেশের ছাত্র, শিক্ষক ও সর্বস্তরের জনতা অংশগ্রহণ করে। একপর্যায়ে গোটা জাতি শুধু কোটা সংস্কার নয়, বরং গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়। পতন ঘটে ফ্যাসিস্ট সরকারের। পরবর্তীকালে দাবি ওঠে রাষ্ট্র সংস্কারের এবং গঠিত বিবিধ কমিশন। যথা—জনপ্রশাসন সংস্কার, সংবিধান সংস্কার, পুলিশ সংস্কার, বিচার বিভাগের সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার, সাংবিধানিক সংস্কার, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংস্কার, গণমাধ্যম সংস্কার, শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার, নারীবিষয়ক সংস্কার ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার ইত্যাদি।
বিশ্বব্যাপী সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয় ষোড়শ শতকে ইউরোপে। তদসময়ে দার্শনিক মার্টিন লুথার গির্জার সংস্কার সাধন ও ধর্মতত্ত্বের পুনর্বিশ্লেষণের জন্য প্রোটেস্টান রিফরমেশন মুভমেন্টের নেতৃত্ব প্রদান করেন। জার্মানির আইজলবেন শহরে (১৪৮৩-১৫৪৬) জন্মগ্রহণকারী মার্টিন লুথার ছিলেন বাল্যকাল থেকে ধর্মানুরাগী। তিনি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে অগাস্টিনীয় সম্প্রদায়ে যোগ দেন এবং ১৫১১ খ্রিষ্টাব্দ সম্প্রদায়ের কাজে রোম সফর করেন। সেখানে তিনি গির্জার কর্মকর্তাদের জীবনপ্রণালি প্রত্যক্ষ করে বিস্মিত ও মর্মাহত হন। মার্টিন লুথার অনুভব করেন, বিধাতার সঙ্গে ব্যক্তির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান। এ সম্পর্কের জন্য পোপের মাধ্যম অনুসরণ করা অপ্রাসঙ্গিক। ক্যাথলিক গির্জা উচ্চতর কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাজাকে নিয়ন্ত্রণ, গির্জার হাতে রক্ষিত ভূসম্পত্তি ও অন্যান্য সম্পদের নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যক্তি বিবেকের স্বাধীনতাসহ বিবিধ বিষয় বিবেচনায় তিনি গির্জাভিত্তিক সংস্কারে ব্রতী হন। মার্টিন লুথারের সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ফসল ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ প্রবর্তন, ইউরোপে ধর্মীয় গোঁড়ামির অবসান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যপূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।