সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বৈঠকের আগে তিনি দেশটিতে সফরে যাচ্ছেন।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রুশ বার্তাসংস্থা আরটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক অন্যতম সহকারী ইউরি উশাকভ সৌদি আরব সফর করছেন। সোমবার তারা সৌদি আরবে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো পুতিন এবং ট্রাম্পের আসন্ন শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে গত সপ্তাহে, ট্রাম্প এবং পুতিনের মধ্যে প্রথম টেলিফোনে আলোচনা হয়। ৯০ মিনিটের এই আলোচনার পর মস্কো এবং ওয়াশিংটন জানায়, দুই নেতা শিগগিরই মুখোমুখি বৈঠক করবেন। পরে জানানো হয়, এ শীর্ষ বৈঠক সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত হবে।সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পেসকভ জানান, পুতিনের নির্দেশে ল্যাভরভ এবং উশাকভ রিয়াদে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার তারা আমেরিকান প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আলোচনাগুলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য নিবেদিত হবে, যার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেন সংকট সমাধানের বিষয়ে আসন্ন আলোচনা এবং পুতিন-ট্রাম্প শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন।
পেসকভ ব্যাখ্যা করেন যে সৌদি আরবকে এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে কারণ এটি আমেরিকান এবং রাশিয়ান উভয়পক্ষের জন্যই উপযুক্ত। যা দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সৌদি আরবের কৌশলগত গুরুত্বকে তুলে ধরে।
এদিকে ট্রাম্পের রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার বিষয়টি ইউক্রেন এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ইউরোপীয় নেতাদের আশঙ্কা, ট্রাম্প ইউক্রেনকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে সম্মত হতে পারেন, যার ফলে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে চলে যেতে পারে এবং পুতিনের দাবিগুলো পূরণ হতে পারে।
রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ এবং দেশটিকে ‘নিরপেক্ষ’ রাখা। পুতিন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং ইতোমধ্যে যে ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সেটির ওপর ইউক্রেনের দাবি ছাড়তে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা আকার-ইঙ্গিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন, উভয় দাবিতেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থন থাকতে পারে। এর মধ্যেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। অন্যদিকে, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতারাও প্যারিসে জরুরি বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সৌদি আরবে রুশ-মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠক, ইউরোপের নেতাদের তৎপরতা এবং ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক রাজনীতির নতুন মোড় নিতে পারে। তবে আসল প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই বৈঠকগুলো কি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের ইঙ্গিত দিচ্ছে, নাকি ইউরোপ ও বিশ্ববাসীকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে?