সারা দেশে ছাত্র-জনতার স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলন তখন তুঙ্গে। রাজধানী ঢাকার রাজপথ উত্তাল। ঠিক এসময় ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর এলাকায় সন্তানের জন্য দুধ কিনতে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হোন চুয়াডাঙ্গার সন্তান প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভ।
কৃষক পরিবারের সন্তান প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভ (২৮) যশোরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে ডিপ্লোমা শেষে ঢাকায় একটি লিফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। শাহরিয়ার শুভ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের মণ্ডল পাড়ার কৃষক আবু সাঈদ ও চম্পা খাতুনের ছেলে। আবু সাঈদ দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে, শুভ মেজো।শহীদ শাহরিয়ার শুভর স্ত্রীর নাম রাজিয়া সুলতানা। তাদের ১৪ মাস বয়সী মোস্তাফিজ মুহিন নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামী শুভ মারা যাওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে রাজিয়া ঢাকাতে বসবাস করছেন। তিনি একটি অনলাইন কোম্পানিতে চাকরি করছেন।
শাহরিয়ারের বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন ঢাকার একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। ছোট ভাই সিয়াম আলী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। একমাত্র বোন লিজা খাতুন গৃহিণী।
শাহরিয়ার শুভ ঢাকার মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় শুভ ছেলের জন্য দুধ কিনতে বের হন। পরে ঢাকার মিরপুর এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভ। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত্যু বরণ করেন তিনি।
১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে শাহরিয়ার শুভ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। বাবা আবু সাঈদ ও মা চম্পা বেগম ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। বাড়ির উঠানে কুল গাছ। কুল পেকে টসটস করছে। অথচ খাওয়ার কেউ নেই। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে মারা যাওয়ার ৭ মাস অতিবাহিত হলেও আজও স্বাভাবিক হতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা।
শুভর বাবা আবু সাঈদ বলেন, আমার তিন ছেলের মধ্যে শাহরিয়ার শুভ মেজো। ১৯ জুলাই সে ঢাকার মিরপুর এলাকায় ছেলের জন্য দুধ কিনতে বের হয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয়। ২৩ জুলাই শহীদ হন।