‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর। অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। মানবসভ্যতার বিকাশে নর-নারীর ভূমিকা ঠিক এভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আল্লাহ তায়লাও নর-নারীকে সৃষ্টি করেছেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। তাই নারী ও পুরুষ চিরকালের সার্থক সঙ্গী, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
কিন্তু কিছু কাজ এখনো যেন শুধু পুরুষেরই হয়ে রয়েছে। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। কেউ কেউ সেই ছক বাঁধা নিয়মের শেকল ভেঙেছেন। অনেকে চাইছেন ভাঙতে। তাদেরই একজন ঘাদা আল-ছাওয়াদি। নারীরাও যে পুরুষের কাজ করতে পারে, তা করে দেখাবার পণ করেছেন তিনি।
সব বাধা অতিক্রম করে চ্যালেঞ্জিং কাজকে পেশা হিসেবে বেঁচে নিয়েছেন ২০ বছর বয়সী আল-ছাওয়াদি। তিউনিশিয়ার এই তরুণী দৃঢ় সংকল্প আর নিজের দক্ষতা নিয়ে কর্মকার ও ওয়েল্ডিংয়ের মতো কাজ করে যাচ্ছেন অনায়েসে। পুরুষের আধিপত্য থাকা এই পেশায় তিনি নিজে থেকেই এসেছেন। আর তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কাজের প্রচারণা চালান আল-ছাওয়াদি নিজেই।
আল-ছাওয়াদি সিদ্ধান্ত নেন তিনি মেশিনারি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনফরমেশনের ওপর বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ নেবেন। সেই ভাবনা থেকেই একটি ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন তিনি। সেখানে কর্মকার ও ওয়েল্ডিং শিখছেন আল-ছাওয়াদি। তিনিই একমাত্র তরুণী যে এই ট্রেনিং নিতে প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি হয়েছেন।ট্রেনিং শেষে আল-ছাওয়াদির অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। তার ভাষায়, আমার আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি শেষে, আমি কোথাও চাকরি খুঁজে পাচ্ছি না। আমি মেয়ে তাই তিউনিশিয়ার কোনো প্রতিষ্ঠানই আমাকে চাকরি দিতে চাইছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান তো আমাকে তাদের অফিসে ঢুকতেই দেয়নি। চাকরি খুঁজতে গিয়ে প্রতিবারই আমাকে শুনতে হয়েছে, মেয়েদের জন্য এই পেশায় কর্ম খালি নেই।
সংবাদমাধ্যম ভায়োরি নিউজকে তিনি বলেন, মানুষ আমাকে গ্রহণ না করলেও আমি আমার আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে যাব। আমি চাকরি খুঁজতেই থাকব। একদিন কেউ আমাকে চাকরি দেবে, আমার এই আত্মবিশ্বাস রয়েছে।
নারী হওয়ায় অনেকেই আল-ছাওয়াদির দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন। কিন্তু ট্রেনিং স্টেশন ভালোভাবেই উতরে গেছেন এই তরুণী। এমনকি কানাডার কর্তৃপক্ষ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো যে মূল্যায়ন করেছিল তাতেও ভালো করেছেন আল-ছাওয়াদি। এজন্য তাকে ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল কার্ডও দিয়েছে তারা
কর্মকারের এই পেশার প্রতি ছোটবেলা থেকেই নেশা তৈরি হয়েছিল আল-ছাওয়াদির। বাবার হাত ধরে তার কর্মস্থলে আসতেন তিনি। আবার পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে এই কাজে হাতেখড়িও হয় আল-ছাওয়াদির। তখন থেকেই বাবাকে সাহায্য করছেন তিনি। আর আল-ছাওয়াদির বাবাও তাকে শিখিয়েছেন এই পেশার সব ‘গোপন’ রহস্য।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: শামসুদ্দোহা
শ্রীপুর,গাজীপুর
মোবাঃ +৮৮০ ১৭১৩৬৪৮৬৭১
Copyright © 2025 Dainik Somoyer Songbad. All rights reserved.