দেখতে অতি সাধারণ। কিন্তু এই ফুল স্বর্ণের চেয়েও দামি। অত্যন্ত নাজুক এ ফুল খুব যত্ন করে চাষ করতে হয়। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে খুব সতর্কতার সঙ্গে এ ফুল সংগ্রহ করতে হয়, যেন গাছের কোনো ক্ষতি না হয়। এই ফুলের আঁশ থেকেই তৈরি হয় বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলা। কোনো খাবারে এই মসলা মেশালে তা থেকে সুগন্ধি যেমন বের হয়। তেমনি এ মসলার রয়েছে আকর্ষণীয় রঙ এবং নানা স্বাস্থ্যগত গুণাগুণ।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি এ মসলার নাম জাফরান। মাত্র কয়েক গ্রাম ভালো মানের জাফরানের দাম লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। অত্যন্ত দামি এ মসলা প্রধানত ইরান, পাকিস্তান, ভারত ও এর আশপাশের অঞ্চলেই উৎপন্ন হয়। আর সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের জাফরান হয় কাশ্মীরে।
কাশ্মীরের পামপোরে অঞ্চলে নারী ও শিশুসহ প্রায় ৩০ হাজার পরিবার জাফরান চাষবাসের সঙ্গে জড়িত। এখানে উৎপন্ন হওয়া জাফরানে অতিমাত্রায় ক্রোসিন থাকে। চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ উপাদান বিশ্বের অন্য কোথাও উৎপন্ন হওয়া জাফরানে আর এত বেশি মাত্রায় থাকে না। অত্যন্ত দামি হওয়ায় খুব যত্ন সহাকারে এ ফুলের চাষ করা হয়।
ফুল দেখতে উজ্জ্বল বেগুনি রং ধারণ করলে তা ছিঁড়ে ফেলতে হয়। তবে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের কোনো ক্ষতি না হয়। এরপর গর্ভমুণ্ড ফুল থেকে আলাদা করা হয়। সেই গর্ভমুণ্ড রোদে শুকালেই পাওয়া যায় জাফরান, যা বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলা। পাইকারি বাজারে প্রতি এক পাউন্ড কাশ্মীরি জাফরানের দাম ৬০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আর খুচরা প্রতি পাউন্ড জাফরানের দাম ১২ লাখ টাকার বেশি হতে পারে।অত্যন্ত দামি হওয়ায় যারাই এ মসলার চাষ করেন, রাতারাতি ধনী হয়ে যেতে পারেন! মূলত শীতভাবাপন্ন অঞ্চলে এ মসলার উৎপাদন হলেও বাংলাদেশেও এটি চাষের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশি গবেষক ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন আলো-আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত কক্ষে জাফরান ফুল ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন।
এই অধ্যাপকের ভাষ্য, উন্মুক্ত জায়গায় উপযুক্ত পরিবেশেও জাফরান চাষ বেশ ব্যয়বহুল। সে হিসাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত কক্ষে উৎপাদন খরচ আরেকটু বেশিই হওয়ার কথা। কিন্তু এ পদ্ধতিতে আবহাওয়াজনিত কারণে ফসল মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর বছরে একাধিকবার ফলন ওঠানো যাবে।
তাই এই গবেষক মনে করেন, এর সঙ্গে বিশ্বব্যাপী জাফরানের বিপুল চাহিদা ও দামের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া সাপেক্ষে বাংলাদেশেই এর লাভজনক বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যে কেউ এটা চাষ করতে পারবেন।
জাফরান সারাবিশ্বে রান্নায় ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত। খাদ্য-রসিকদের কাছে এর আলাদা কদর আছে। মোঘলদের রসুইঘর থেকে শুরু করে হালের তারকাখচিত হোটেলগুলোতেও জাফরানের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। খাবারে এই জাফরান মেশালে তা যেমন স্বাদে আনে ভিন্নতা, আবার ছড়ায় মোহনীয় সুগন্ধও।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: শামসুদ্দোহা
শ্রীপুর,গাজীপুর
মোবাঃ +৮৮০ ১৭১৩৬৪৮৬৭১
Copyright © 2025 Dainik Somoyer Songbad. All rights reserved.