গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অ্যাপভিত্তিক পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এতে করে অ্যাপসে চাপ দিলেই অটোমেটিক্যালি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত হবে। পরে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করবে।
শনিবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর কাওরান বাজারের ডেইলি স্টার ভবনে এই হেল্প অ্যাপের উদ্বোধন করা হয়। ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) ও সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে অ্যাপটি চালু করেছে। যা গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফৌজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক এবং সঞ্চালনা করেন বিজেসির নির্বাহী শাহনাজ শারমীন।
অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা গণমাধ্যমে আসে না। কারণ নির্যাতিত ও তার পরিবার বিষয়গুলো সবার সামনে আনেন না।
মো. সাজ্জাত আলী বলেন, বাসগুলোতে অনেক ভিড় থাকে। অনেক বাস কন্ট্রাক্টারও নারীদের হ্যারাজ করে। এই অ্যাপে যারা অভিযোগ করবেন অটোমেটিক্যালি সেটা এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে যাবে। পরে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করবে। ডিএমপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।
মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, কমিউনিটির সম্পৃক্তরা ছাড়া এই সমস্যা থেকে আমরা কোনোভাবেই বেরিয়ে আসতে পারব না। তিনি বলেন, একটি মেয়ে ধর্ষিত হলে পুরো দেশ ধর্ষিত হয়। এটি কোনো ব্যক্তির ইস্যু নয়, এটি একটি সামাজিক ইস্যু, পুরো দেশের ইস্যু।
সুইচ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মাইনুল আহসান ফয়সাল বলেন, পরিসংখ্যনে দেখা গেছে, গণপরিবহণে ৬৪ শতাংশ নারী বিভিন্ন ধরণের হ্যারাজমেন্টের শিকার হচ্ছে। এসব হ্যারাজমেন্ট কমাতেই আমাদের এই অ্যাপ।
সভাপতির বক্তব্যে বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক বলেন, ধর্ষণ শব্দটি ব্যবহার না করে ঘটনার ভয়াবহতা বোঝাতে ভিন্ন কী শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে সে বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সব ধরনের সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সলিউশন স্পিনের পরিচালক আব্দুল্লাহ্ আল সালেহ, বিজেসির সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিজেসির ট্রেজারার মানস ঘোষ, ট্রাস্টি নূর সাফা জুলহাজ ও তালাত মামুন।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড ও আর্টিকেল নাইনটিনের সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
HELP (হ্যারাসমেন্ট এলিমিনেশন লিটারেসি প্রোগ্রাম) একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনভিত্তিক প্রকল্প, যা ঢাকা শহরের পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি কেবলমাত্র স্মার্ট ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীদের জন্য ডিজাইন করা। এর মাধ্যমে চলন্ত বাস বা যেকোন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নারীরা চলাচলের সময় তার সঙ্গে ঘটা যে কোনো ইভটিজিং বা যৌন নিপীড়নের জন্য তৎক্ষণাৎ সহায়তা চাইতে পারবেন, জরুরি সেবা নিতে পারবেন, ঘটনার রিপোর্ট করতে পারবেন।
পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই সেবাটি ঢাকার বসিলা থেকে সায়েদাবাদ রুটে বাস্তবায়ন করা হবে। যদিও সীমিত আকারে সেবাটি দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে নারীরা নিতে পারবেন। মোহাম্মাদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত চলা বাসে কিউআর কোড স্থাপন ও এই অঞ্চলে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলাদা স্বেচ্ছাসেবক দলও তৈরি করা হবে, যেন নারীরা সরকারি সহায়তার পাশপাশি ইমার্জেন্সি ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে দ্রুত রেসপন্স পেতে পারেন এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে নারীর প্রকৃত অবস্থান জেনে দ্রুতই যেন সহায়তা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারেও এই এপ্লিকেশন কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং স্বেচ্ছাসেবকেদের এক্ষেত্রে ম্যানুয়ালি কাজ করারও অবস্থা থাকছে।
এই এপ্লিকেশন নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা রিপোর্ট করা এবং জরুরি সহায়তা পাবার পথকে সহজ করবে। সরকারের ইমার্জেন্সি হেল্পলাইন ৯৯৯, নিকটবর্তী থানা, ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলকে কানেক্ট করবে হেল্প। ফলে ইমার্জেন্সি অবস্থায় নারীরা যেমন সহায়তা পাবেন তেমনি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তথ্য প্রমাণাদিসহ দেয়ার ব্যবস্থাও থাকছে এই এপ্লিকেশনে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: শামসুদ্দোহা
শ্রীপুর,গাজীপুর
মোবাঃ +৮৮০ ১৭১৩৬৪৮৬৭১
Copyright © 2025 Dainik Somoyer Songbad. All rights reserved.