ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নী ও লন্ডনের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি জানিয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার পূর্বাচলে সরকারি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন তিনি। এছাড়া গুলশানের একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য ভুয়া নোটারি তথ্য ব্যবহার করেছেন তিনি। এতে আইনজীবীর জাল সই ব্যবহার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। টিউলিপ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’ ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেন তিনি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, টিউলিপ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য পূর্বাচলের নিউ টাউন প্রকল্পের সরকারি প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে দুদক। বৃহস্পতিবার ( ১৩ মার্চ) প্রকাশিত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকার গুলশান এলাকার একটি ফ্ল্যাট তার বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করতে জাল নোটারি দলিল ব্যবহার করেছেন তিনি।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের সিল ব্যবহার করা হলেও তিনি এই দলিল নোটারাইজ করেননি। তার সিল ব্যবহার করা হলেও স্বাক্ষরটি তার নয় বলে জানান ওই আইনজীবী।
দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেছেন, এটি কেবল হিমশৈলের চূড়া মাত্র। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে, যা দুর্নীতির বিশাল আকার তুলে ধরবে।
গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তারপর থেকে তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জমি বরাদ্দ ও আর্থিক অনিয়মের একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। দুদকের দাবি, পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে প্রায় ৬০ কাঠা (এক একর) সরকারি জমি শেখ হাসিনা, তার সন্তান ও নিকটাত্মীয়দের নামে অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, ঢাকায় তার অন্য একটি সম্পত্তি থাকার কারণে জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে তিনি অযোগ্য ছিলেন। তবে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিয়মকানুনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে এই মূল্যবান জমি বরাদ্দ নেন। এজন্য তারা পাবলিক লটারি এবং যোগ্যতার মানদণ্ড এড়িয়ে গেছেন, যা মূলত সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত ছিল।
দুদকের তদন্ত অনুযায়ী, টিউলিপ ২০১৫ সালে একটি হেবা দলিল (ইসলামিক আইনে সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল) ব্যবহার করে তার বোনের নামে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন। এই দলিলে জাল নোটারি ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদকের তথ্যমতে, এই জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানা গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
টিউলিপের এক মুখপাত্র জানান, এই অভিযোগের জন্য কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে এই বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তিনি এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন।