মাগুরা ধর্ষণের শিকার হয়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় শোক মিছিল করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে দিকে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এই কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনটি আমরা গতকালই (শুক্রবার) শোক দিবস ঘোষণা করেছিলাম। মাগুরার শিশুটির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশ শোকে পাথর হয়ে গেছে। তার প্রতিবাদে আমাদের পার্টি অফিসে কালো পতাকা উত্তোলন করেছি। সারা দেশেও উত্তোলন করা হয়েছে। বিকেলে আমরা শোক মিছিল করব।’
এদিকে হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে শনিবার (১৫ মার্চ) গণমিছিলের যে কর্মসূচি দিয়েছিল বামপন্থি আটটি সংগঠন। সেটিও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থগিত করা হয়। তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেই কর্মসূচি শেষ করেছে এদিন।
শুক্রবার দেওয়া এই কর্মসূচির ‘পাল্টা’ হিসেবে ঢাকার পুরানা পল্টনে সিপিবির কার্যালয়কে ‘ছাত্র-জনতার কার্যালয়’ বানানোর ডাক দেন লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি আওয়ামী লীগকে সিপিবি ‘পুনর্বাসন’ করছে অভিযোগ করে সিপিবি অফিস ঘেরাও করার ঘোষণা দেন।
তবে পিনাকীর সেই ডাকের প্রেক্ষিতে এদিন সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোনো জনসমাগম বা বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি।
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন করা বাড়তি পুলিশ, সংবাদকর্মী আর সিপিবির কিছু নেতাকর্মী ছাড়া কাউকে চোখে পড়েনি। সেনা সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে।
কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সিপিবি ‘পুনর্বাসন’ করছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তি ভবনের সামনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক প্রিন্স তিনি বলেন, ‘যারা ইতিহাস জানে না, তারা কী বলল না বলল, এটাতে দোষ দিতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে ক্ষমতার পরিবর্তন চান, কিন্তু ব্যবস্থার পরিবর্তন চান না। তারা তাদের পরিস্থিতি ঠিক রাখতে চায়। একমাত্র বামপন্থী এবং কমিউনিস্টরা জনগণের মুক্তির জন্য কথা বলে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই নেতাকর্মীরা সিপিবির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ১০টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন করেন সিপিবির সভাপতি মো. শাহ আলম।
এ সময় নেতাকর্মীরা ‘কমরেড, কমরেড, ভেঙে ফেলো ব্যারিকেড’, ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও লড়াই করো’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বামপন্থি আটটি সংগঠনের গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, ‘আমাদের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বলা হয়েছে, আমরা যেন এই কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করি, পালন না করি। হামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের যে গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল শহীদ মিনার থেকে টিএসসি পর্যন্ত। সেই গণমিছিল স্থগিত করে আমাদের আজকের কর্মসূচি এখানেই সমাপ্ত করছি।’
গণমিছিলের উদ্যোগ নেওয়া দলগুলো ছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ উদিচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)।