শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো আলোচনা করেনি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
শনিবার (১৫ মার্চ) মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। এরপর থেকে ভারতেই অবস্থান করছেন তিনি।
তার বিরুদ্ধে বর্তমানে বাংলাদেশে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে একাধিকবার জানিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের এ সফর সরকার ও বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এ সফরকালে মহাসচিব জানতে পেরেছেন, রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে, নিজস্ব পরিচয় অটুট রাখতে, অধিকার ভোগ করতে ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে কতটা মরিয়া।’
‘রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে মহাসচিব তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার এই জনগোষ্ঠীর দুর্দশার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং সর্বাত্মক সহায়তা নিশ্চিত করতে তিনি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।’
‘তিনি ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘ সম্মেলন সফলভাবে আয়োজনের প্রতি তার সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন।’
এর আগে এদিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজসহ বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনীতিকদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং আমার বাংলাদেশ পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
বৈঠকে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মহাসচিব অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের ‘প্রকৃত রূপান্তর’ নিশ্চিত করতে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার জটিলতা উপলব্ধি করেন এবং এর প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এ সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।’
শনিবার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানকেও আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে দেখা গেছে।
তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, তার এ সফর ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেয়েও বড় কিছু করবে। তার সমর্থনের আশ্বাস আমাদের সফল সংস্কার প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্রে উত্তরণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকালে জাতিসংঘ প্রধান তার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকের পর তারা একই বিমানে কক্সবাজার যান, যেখানে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন এবং প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
গতকাল মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের আগে গুতেরেস পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশের চলমান পরিবর্তন ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন গুতেরেস। তিনি শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির জন্য ধন্যবাদ জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমানও জাতিসংঘ প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
জাতিসংঘের এক বার্তায় জানানো হয়, তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা ও অন্য সংখ্যালঘুদের বিষয়ে আসন্ন উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: শামসুদ্দোহা
শ্রীপুর,গাজীপুর
মোবাঃ +৮৮০ ১৭১৩৬৪৮৬৭১
Copyright © 2025 Dainik Somoyer Songbad. All rights reserved.