দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাটলা ইঊনিয়নের দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের দুই মেথাবী শিক্ষাথী ফারহানা আক্তার ও সাদিয়া তামান্না। শুকনা মৌসুমে ধুলা আর বর্ষায় কাদামাখা মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে দাখিল সম্পন্ন করেছে্ আলিমের গন্ডি পেরোতে গ্রাম থেকে সাত কিলোমিটার দূরের মাদ্রাসায় যেতে হয়েছে তাঁদেকে। সেখানে ভালো রেজাল্ট করে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে দুজনিই। তাঁরা এই গ্রামের প্রথম, যাঁরা এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছে।
৬ মার্চ ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের খ ইউনিট তথা কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তির জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন দুই সহপাঠী। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ফারহানার মেধাক্রম ৬৭৩। আর তামান্নার মেধাক্রম ৭২১।
ফারহানা আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আর বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চায় তামান্না।
ফারহানা আক্তার ওই গ্রামের দবিরুল ইসলাম ও শিউলি আক্তারের মেয়ে। তাঁর বাবা পেশায় একজন অন্যের জমি বর্গাচাষি। সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য বর্ষা মৌসুমে মাছের পোনার ব্যবসা করেন। সাদিয়া তামান্না একই গ্রামের আতাউর রহমান ও কাওকাবুন নাহারের মেয়ে। তামান্নার বাবা গ্রামের মাদ্রাসার একজন সহকারী মৌলভি শিক্ষক। এই দুজন দাউদপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০২২ সালের দাখিল পরীক্ষা এবং মুকুন্দপুর ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০২৪ সালের আলিম পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে জিপিএ—৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
ফারহানা আক্তার বলে, বাবা সংসারের অভাব—অনটনের মধ্যে বড় হয়েছেন। কোন রকমে প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পার করছি । বাবা এখন রোদে পুড়ে আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছেন। কষ্ট করে পড়াশোনা করছি। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে । কিন্তু এমন প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার ব্যয় কি ভাবে আসবে তা নিয়ে বাবা মার দু:চিন্তা।
ফারহানা ও তামান্নার শিক্ষক ও মুকুন্দপুর ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক জাকির হোসাইন বলেন, ‘ফারহানা ও তামান্না আমার ছাত্রী। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকে লেখাপড়া করে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে এত ভালো স্কোর নিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, এটি আমাদের জন্য গর্বের ব্যাপার। তাঁরা আমাদের এলাকার সম্পদ, দেশের সম্পদ। আমি আশা করছি, পড়াশোনায় ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়েও সর্বোচ্চ ভালো করবে তারা।’
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম বলেন, সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে লেখাপড়া করে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ফারহানা ও তামান্না শুধু বিরামপুর নয়, সারা দেশের মেয়েদের জন্য গর্ব ও অনুপ্রেরণার। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা লেখাপড়ার জন্য যদি কোনো আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাহলে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সহয়োগিতা করা হবে ।