পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের বোলান জেলায় যাত্রীবাহী ট্রেনে হামলা চালিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এরপর হামলাকারীদের রুখতে সর্বশক্তি দিয়ে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। ব্যাপক উত্তেজনা এবং অনিশ্চয়তা কাটিয়ে সেই অভিযানে সফলতার ঘোষণা এসেছে। খবর জিওনিউজের।
বুধবার রাতে দেশটির সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে জানিয়েছে, ট্রেনটিতে জিম্মিদশার অবসান হয়েছে। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করে ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনারা। উদ্ধার করা হয়েছে জিম্মি যাত্রীদের।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী অভিযানের সমাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পাকিস্তান বিমান বাহিনী (পিএএফ), স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ (এসএসজি), সেনাবাহিনী এবং ফ্রন্টিয়ার কর্পস (এফসি) এর ইউনিটগুলো অভিযানে অংশ নেয়। বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) কয়েক ডজন জঙ্গি মঙ্গলবার রেললাইন উড়িয়ে দিয়ে জাফর এক্সপ্রেসের গাতিরোধ করে। ট্রেনটিতে ৪০০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিল।
তিনি বলেন, ৩৩ জন সন্ত্রাসীকে জাহান্নামে পাঠানো হয়েছে। ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের সময় কোনো যাত্রীর ক্ষতি হয়নি। তবে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু হওয়ার আগেই সন্ত্রাসীদের গুলিতে ২১ জন যাত্রী শহীদ হন। আর অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্য নিহত হয়েছেন।
অভিযান খুব কঠিন ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, জাফর এক্সপ্রেসের যাত্রী নারী ও শিশুদের আক্রমণকারীরা মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। সেনা অভিযান থেকে বাঁচতে হামলাকারীরা এ কাজ করে। কিন্তু চৌকস সেনাদের কাছে হামলাকারীদের এ কৌশল কাজে আসেনি। সেনারা যাত্রীদের নিরাপদ রেখেই হামলাকারীদের হত্যা করতে সমর্থ হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সকল সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার পরও সেনাদের উপস্থিতির বিষয়ে তিনি জানান, সেখানে বোমা পুঁতে রাখা হতে পারে। সেসবের সন্ধান এবং নিষ্ক্রিয় করতে একটি বিশেষজ্ঞ দল ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং’ পদ্ধতি অনুসারে ট্রেন এবং আশপাশের এলাকা পরিষ্কারের কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ডন জানিয়েছে- ট্রেন থামানোর জন্য হামলাকারীরা রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং চালকের কক্ষে গুলি চালায়, এতে ট্রেনের চালক আহত হন। এরপর হামলাকারীরা ট্রেনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ও যাত্রীদের জিম্মি করে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ট্রেনটিতে ৯টি বগিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিলেন। তবে হামলাকারীদের সংখ্যা কতজন তা নিশ্চিত করা যায়নি।
ট্রেন জিম্মির পরপরই দেশটির নিষিদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এ হামলার দায় স্বীকার করে। ট্রেন অপহরণের কয়েক ঘণ্টা পর তারা এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হতেই মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, পাহাড়ি ও নির্জন একটি অঞ্চল। ট্রেনটি একটি টানেল থেকে মাত্র বের হয়েছে। ঠিক সেই সময় রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তখন ট্রেনটি থেমে যায়। ওই সময় কালো ধোঁয়া দেখা যায়।
অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা আগেই পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে রেখেছিল। বিস্ফোরণের পরেই তারা নিচে নেমে আসে এবং গুলি করতে করতে ট্রেনটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, জাফর এক্সপ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২০ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।